গত ৭ আগস্ট বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণের পর গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন সকল সমন্বয়ক এবং উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, জনগণ যদি মনে করে তরুণরাই রাষ্ট্রের হাল ধরবে, তবে জনগণের সেই আহ্বানে সাড়া দেয়ার জন্য তরুণরা সকলেই প্রস্তুত আছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোনো ‘নতুন রাজনৈতিক দল’ গঠন করা হবে কি না তার জবাবে সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, মানুষ বাকি দুইদল থেকে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল তরুণদের নেতৃত্বে দেখতে চায়, যারা সৎভাবে এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে বাংলাদেশে সুন্দর সমাজ গঠন করবে। বাংলাদেশের মানুষের চাওয়ার সে জায়গা থেকে আমাদের মনে হচ্ছে, জাতীয় পর্যায়ে আমরা একটি রাজনৈতিক দলের চিন্তাধারায় যেতে পারি।
তিনি আরও জানান,বাংলাদেশ সরকার পতনের পর প্রথম তাদের নতুন দল গঠনের ভাবনাটি আসে। তবে কখন বা কীভাবে দল গঠন হবে, নেতৃত্বে কারা থাকবে এই বিষয়ে কিছুই বলেনি তিনি।
এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রয়োজন ‘ফুরিয়ে এসেছে’ বলেই মত আরেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমার।
ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম। আমাদের সকল নেতৃত্বদের মধ্যে ৬ জুলাই এর দিকেই এই প্ল্যাটফর্মকেন্দ্রীক একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়ে যায়। সেটা ছিল, এই আন্দোলনের মঞ্চ থেকে পরবর্তীতে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন হবে না। এই আন্দোলনের মঞ্চকে রাজনৈতিক কাঠামোতে পরিণত করলে আমাদের গণঅভ্যুত্থান তার সকল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হবে। অনেক সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভাবখানা এমন যেন তারাই একটা কিছু! ছাত্র-জনতারা একেকটা অবজেক্ট! নতুন স্বৈরাচার গজানোর আগেই ছাত্র-জনতার সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নয়তো এই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামক আমাদের আন্দোলনের প্ল্যাটফর্মটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হবে এবং দ্রুত সকল মানুষের আস্থা হারাবে। আমাদের সকলের বুঝতে হবে, কোথায় আমাদের থামতে হবে।”
রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলাপ চললেও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সেক্ষেত্রে কেবল রাষ্ট্রের সকল প্রয়োজনে এবং জনতার চাহিদার ভিত্তিতে দল গঠনের বিষয়ে ভাবা হবে বলে জানান তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “ বর্তমানে বিদ্যমান লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বে উঠেই কাজ করার সুযোগ যতক্ষণ থাকছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জায়গাটিতেই কাজ করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবো। কিন্তু যখনই ছাত্র-নাগরিকদের চাহিদা তৈরি হবে যে পলিসি- আইন মেকিংয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়দের অংশ নেয়া আমরা দেখতে চাই এবং সেটা নতুন ধরনের কোনো রাজনৈতিক এপ্রোচের মধ্য দিয়ে তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যারা রয়েছে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”
বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত ইতিহাস বলছে যে, সরকারে অবস্থান করে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি জনসাধারণের কাছে সর্বক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে এমন নয়। তবে এর আগে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হয়েছিল, তখন এর অন্যতম বিশেষ প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন।
দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা সরকার পতনে ভূমিকা রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি যে জনসাধারণের আস্থা তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে যদি তাদের মধ্য থেকে কোনো রাজনৈতিক দল উঠে আসে তাহলে জনগণের কাছে তারা গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে মনে করছেন, বর্তমান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।