একসাথে একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার টিপস

একসাথে একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার টিপস

বর্তমানে চাকরির বাজারের নাজেহাল অবস্থা। আর এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাকরিপ্রার্থীরা। তবে এই কথাটা অধিক বেশি সমালোচিত  হলেও এটা সত্যি যে, আপনি যদি নিজেকে দক্ষ ও উপযুক্ত চাকরিপ্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সামনে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে আপনার চাকরির সুনিশ্চিত।মূলত একজন বেকার মানুষ চাকরির পেছনে পাগলের মত ছুটে বেড়ায় বেকারত্বের কালিমাকে দূর করতে এবং নিজের ও পরিবারের ভালো ব্যবস্থা করার আশায়। আর তাই শিক্ষা জীবন শেষ হবার সাথে সাথেই ক্যারিয়ার সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সকলেই প্রায় সকলে ব্যস্ত।

 অনেকেই রয়েছে যারা পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে চাকরিতে নিযুক্ত আবার পরিকল্পনা করেন। আবার কেউ কেউ রয়েছে একটু ভালো মানের চাকরি করার জন্য শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরবর্তীতে ভালো পদে চাকরির জন্য এপ্লাই করেন। এক্ষেত্রে মূলত আপনি কোন পেশায় আগ্রহী এবং কোন পেশার জন্য আপনি উপযুক্ত সেই সাথে আপনার বর্তমান অবস্থান কি এটা নির্ভর করে। তবে সত্যি এটাই আপনি যখন যে পেশাতেই যে অবস্থানে থেকে যেতে চান না কেন, শুধুমাত্র সঠিক প্রস্তুতির প্রয়োজন । 

আর তাই, আপনি যদি চাকরির পরীক্ষায় টিকতে চান তাহলে আপনার বেসিক টা ভালোভাবে জানতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষাতেও ভালো মার্ক থাকতে হবে। কেননা চাকরি পেতে যেমন ডিগ্রী প্রয়োজন ঠিক একইভাবে চাকরির পরীক্ষায় টেকার জন্য প্রয়োজন সঠিক পূর্ব প্রস্তুতি।  তাই এই মুহূর্তে যারা একসাথে একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার টিপস জানতে চাচ্ছেন তাদের জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি। তাই চলুন দেরি না করে কিন্তু শুরু করা যাক:

শূন্য থেকে চাকরির প্রস্তুতি

শূন্য থেকে আপনি যদি চাকরির প্রস্তুতি নিতে চান তাহলে প্রথমত আপনার আত্মবিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে। কেননা শূন্য থেকে কোন কাজ করা খুবই কঠিন আর প্রথমবারের মতো চাকরি খোঁজা এবং কোন চাকরিতে পরীক্ষা দেওয়া সেটা তো আরো বেশি কঠিন। তবে হ্যাঁ আপনি যদি শূন্য থেকে চাকরির প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে চান তাহলে ধারাবাহিকভাবে আপনার যে কাজগুলো করতে হবে সেগুলো হলো:-

  • প্রথমত:  সিলেবাস কালেক্ট করা
  • দ্বিতীয়ত: সিলেবাস সম্পূর্ণ কমপ্লিট করা এবং ব্যাসিক সকল বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা অর্জন করা।
  • তৃতীয়ত: আপনার দক্ষতাকে আরও বেশি দৃঢ় করার প্রচেষ্টা করা।
  • চতুর্থত: আপনার কাজের ওপর এবং নিজের প্রস্তুতির উপর নির্ভর করে একটি নোট তৈরি করা। 
  • পঞ্চমত: শূন্য থেকে অনলাইনের চাকরির প্রস্তুতির জন্য সাহায্য নেওয়া। 

ধাপে ধাপে যদি আপনি এই পাঁচটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন আশা করা যায় তাহলে চাকরির পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হবে। কেননা একেক রকম সিলেবাস থেকে থাকে একই চাকরির পরীক্ষায় যেটা আপনি কিছুটা এনালাইসিস করলেই সংগ্রহ করতে পারবেন। 

আর সেই সাথে, আত্মবিশ্বাস এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কেননা আমাদের মনোবল যদি দৃঢ় না থাকে তাহলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি নার্ভাস হয়ে পড়ি। এতে করে চাকরির পরীক্ষা বেশ খারাপ হয়। 

শূন্য থেকে চাকরি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভর হতে হবে।

সরকারি চাকরির প্রস্তুতি

বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরি পাওয়া মানে সোনার হরিণ পেয়ে যাওয়া। আর আপনি যদি সরকারি চাকরি পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ভালো প্রস্তুতি থাকতেই হবে। 

একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় বাংলাদেশের অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীরা ইংরেজি এবং গণিতে অধিক বেশি দুর্বল। আর তাই সরকারি বাজে কোন চাকরির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি এবং গণিত এর ব্যাসিক সম্পর্কে এ টু জেড জানতে হবে। শুধু তাই নয়, আপনাকে যেমন সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বই পড়তে হবে জ্ঞান অর্জন করতে হবে ঠিক একইভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে মানসিকভাবেও।

 কেননা আপনি যদি মানসিকভাবে প্রস্তুতি না নিতে পারেন তাহলে অনেক বেশি দক্ষ হওয়ার পরবর্তীতে ও চাকরির জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ উপযুক্ত হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন না। অতএব সরকারীর চাকরি পেতে হলে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিতে হলে আপনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার উন্নয়ন করার পাশাপাশি মানসিকভাবেও প্রস্তুত হতে হবে এবং অবশ্যই নিজের সময় মেনটেইন করে চলার অভ্যাস গরতে হবে। 

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির প্রস্তুতি

চাকরির অনেক গ্রুপ আমাদের বাংলাদেশে থাকলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরির জন্য মানসম্মত ও নির্ভরযোগ্য কোন গ্রুপ নেই। তবুও অনেক চাকরি প্রত্যাশীরা এই চাকরিগুলোর জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করে। 

আর তাই আপনিও যদি এই চাকরিগুলো করতে চান, তাহলে ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিতে হবে। আর হ্যাঁ, একটা বিষয় যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখতে পাবেন যে, বাংলাদেশের প্রায় সকল চাকরির পরীক্ষা মূলত একই ক্যাটাগরির হয়ে থাকে। হয়তো কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত করা সম্ভব। 

তবে আপনি যে চাকরিকেই নিজের পেশা হিসেবে বাছাই করেন না কেন, প্রথমত বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নগুলো অনুসরণ করতে হবে এবং নিজের বেসিক টা ঠিক রাখতে হবে। আর হ্যাঁ,  তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে আপনি মূলত যে সকল কাজ করতে পারবেন সেগুলো হলো:-

  • ডাটা এন্ট্রি অপারেটর
  • ব্যক্তিগত সহকারি
  • ক্যাশিয়ার
  • অফিস সহকারি
  • অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর
  • সাঁটলিপিকার কাম কম্পিউটার অপারেটর
  • ষাট মোজাকরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর
  • হিসাব রক্ষক
  • হিসাব সহকারি প্রভৃতি

আর হ্যাঁ, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী পদসমূহে যদি আপনি চাকরির জন্য আবেদন করেন তাহলে পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল পেতে বাংলার যে বিষয় সমূহ সম্পর্কে এ টু জেড জানবেন সেগুলো হলো:-

  • এক কথায় প্রকাশ, 
  • প্রকৃতি ও প্রত্যায়, 
  • কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বঙ্কিমচন্দ্র,শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ জনপ্রিয় কিছু ব্যক্তিত্বের ছদ্মনাম ও জীবনী,
  • বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক,
  • অনুবাদ, বাগধারা, বানান,
  • সমার্থক শব্দ,বিপরীত শব্দ, ধ্বনি,বর্ণ,সন্ধি, সমাস, কারক সম্পর্কে বিস্তারিত।

অন্যদিকে  বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়বস্তু সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে জানতে যেগুলো বিষয় সম্পর্কে ধারণা নিবেন সেগুলো হচ্ছে:

  • ৫২’র ভাষা আন্দোলন, 
  • ভৌগোলিক উপনাম, 
  • বিভিন্ন দেশের পার্লান্টে ভবনের নাম, 
  • গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, 
  • নদ-নদী, 
  • দিবস,
  • কৃষি, বিভিন্ন স্থাপনা
  • ৬৬ ছয় দফা, 
  • ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, 
  • মেগা প্রকল্প, 
  • বিভিন্ন দেশ, 
  • রাজধানী ও মুদ্রা, 
  • পরিসংখ্যান (জনশুমারি, বাজেট), 
  • উপজাতী, 
  • ক্রিকেট ও ফুটবলসহ ইত্যাদি

একসাথে একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার সেরা কার্যকরী সেরা টিপস

একসাথে একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আপনাকে যেসব বিষয় সম্পর্কে জানতে হবে সেগুলো হচ্ছে:

  • নিজের পড়াশোনা সম্পূর্ণভাবে গুছিয়ে নেওয়া
  • চাকরির পরীক্ষায় আসতে পারে এমন সকল বিষয়বস্তু চিহ্নিত করতে হবে।
  • মৌলিক জ্ঞান অর্থাৎ বেসিক নলেজ প্রচুর পরিমাণে বাড়াতে হবে।
  • পূর্ববর্তী চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন অনুসরণ করুন।
  • সকল চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা রাখুন এবং সেগুলো একসাথে করে সেই সম্পর্কে একটি নোট তৈরি করুন।
  • দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতি গ্রহণ করুন
  • রুটিন তৈরি করুন
  • মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করুন
  • যোগাযোগ ও খোঁজখবর ঠিকঠাক রাখুন
  • চাকরির জন্য অবশ্যই জীবন বৃত্তান্ত ঠিকঠাকভাবে সংরক্ষণ করুন পূর্বেই এবং
  • সাম্প্রতিক বিষয়ে নজরদারি হোন

কেননা আমাদের বাংলাদেশে সম্প্রতি এমন অনেক কিছুর অনেক রকম পরিবর্তন ঘটছে যেটা চাকরির পরীক্ষায় আসার মত। সুতরাং চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে চাইলে এবং চাকরির পরীক্ষায় কমন পেতে চাইলে আপনাকে পড়তে হবে, পড়তে হবে এবং পড়তে হবে। মূল কথা পড়ার কোন বিকল্প নেই।

চাকরির পরীক্ষায় সিলেক্টেড না হওয়ার কারণ

চাকরির পরীক্ষায় করা সাধারণ কিছু ভুল আমাদের চাকরি হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ পর্যায়ে চাকরির পরীক্ষায় সিলেক্ট না হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করবো যেগুলো প্রত্যেকেরই মনে রাখা জরুরী। যথা:

১) অতিরিক্ত টেনশন ও চাপে থাকার কারণে উত্তর পত্রে ভুল আনসার দিয়ে আসা।

২)একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কোন একটিতেও ভালো প্রস্তুতি গ্রহণ না করা।

৩)চাকরির পরীক্ষাকে অনেক কঠিন মনে করে অতিরিক্ত নার্ভাস হয়ে পড়া।

৪) পরীক্ষার হলে গিয়ে অন্যের কাছ থেকে দেখা ও শেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা।

৫) পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি না নেওয়া। 

৬) সামর্থ্য বা যোগ্যতা নেই এমন কোন চাকরি করার আশা করা এবং তার পিছনে ছুটে অযথা সময় নষ্ট করা।

৭) চাকরির সম্পর্কে বেসিক ধারণা অর্জন না করার আগেই একাধিক চাকরির প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা করা

৮)সঠিক পরিকল্পনা না থাকা

৯) অযথা সময়ের অপচয় এবং অনলাইনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হয়।

সবশেষে 

চাকরির ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আপনার প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস্য ও সঠিক প্রস্তুতি। সঠিক প্রস্তুতি থাকলে আপনি যেকোনো চাকরির বাজারে টিকে থাকতে পারবেন। প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস এই দুইটাই চাকরির ক্ষেত্রে এবং চাকরি টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলে উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

How useful was this post?

Click on a star to rate it!

Average rating 0 / 5. Vote count: 0

No votes so far! Be the first to rate this post.

As you found this post useful...

Follow us on social media!

We are sorry that this post was not useful for you!

Let us improve this post!

Tell us how we can improve this post?

Leave a Comment